Latest Post


সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও ৩ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৪১ জনে।

বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞাপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে আরও ২৫৭ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এতে করে দেশে করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৮০ হাজার ৫৯৯ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা হয় ২৫ হাজার ২০৩ জনের। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১ দশমিক ০২ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১৮১ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৪৫ হাজার ১১৪ জন।

এর আগে বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৪ জন মারা যান। অন্যদিকে করোনা শনাক্ত হয় ২৯৭ জনের দেহে।

এদিকে, বিশ্বব্যাপী করোনার পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে মারা গেছেন আরও ৭ হাজার ৮২২ জন। অন্যদিকে শনাক্ত হয়েছেন ৭ লাখ ৭ হাজার ৭৬৮ জন।
 
এর আগে বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে মারা গিয়েছিল ৭ হাজার ২৭১ জন। অন্যদিকে শনাক্ত হয়েছিল ৬ লাখ ৮ হাজার ৩৮২ জন।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ কোটি ২৪ লাখ ৫১ হাজার ৮২৮ জন এবং মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩ লাখ ৪৫ হাজার ৯০ জনে। আর সুস্থ হয়েছেন ২৪ কোটি ৪৭ লাখ ৬৬ হাজার ৩৫১ জন।
 
করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছে ৫ কোটি ১২ লাখ ৯০ হাজার ৯৭৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ৮ লাখ ২৩ হাজার ৩৯০ জনের।
 
আক্রান্তে দ্বিতীয় এবং মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত করোনায় ৩ কোটি ৪৭ লাখ ১৮ হাজার ৬৬৯ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ২২৭ জনের।

আক্রান্তে তৃতীয় ও মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত মোট সংক্রমিত হয়েছেন ২ কোটি ২২ লাখ ১ হাজার ২২১ জন এবং এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ ১৭ হাজার ৩৪৮ জনের।
 
আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে থাকা যুক্তরাজ্যে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ১ কোটি ৮ লাখ ৭৩ হাজার ৪৬৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪৭৭ জন।
 
পঞ্চম স্থানে থাকা রাশিয়ায় এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার ২৮৬ জন। মারা গেছেন ২ লাখ ৯২ হাজার ৮৯১ জন।
 
আক্রান্তের তালিকায় তুরস্ক ষষ্ঠ, ফ্রান্স সপ্তম, জার্মানি অষ্টম, ইরান নবম এবং আর্জেন্টিনা দশম অবস্থানে রয়েছে। এ তালিকায় বাংলাদেশে অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৩১তম।
 
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২২৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।


প্রবল শক্তি নিয়ে ফিলিপাইনে আঘাত হানতে যাচ্ছে শক্তিশালী টাইফুন ‘রাই’। ঘূর্ণিঝড়টি দেশটির উপকূলের কাছাকাছি চলে আসায় বহু লোককে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসে আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস, ঝড়ো বাতাস এবং ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। এটি আরও শক্তি সঞ্চার করে সুপার টাইফুনে রূপ নিতে পারে।

বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকা এবং সংযুক্ত কেন্দ্রীয় অংশে আঘাত হানবে ‘রাই’। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬৫ কিলোমিটার থেকে সর্বোচ্চ ২০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি দেখে বোঝাই যাচ্ছে উপকূলীয় এলাকায় এটি ব্যাপক তাণ্ডব চালাবে। ভারী বৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধস হতে পারে। নাবিক ও মৎস্যজীবীদের বন্দরে অথবা দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসার নির্দেশনা দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। ঘূর্ণিঝড় রাই সব ধরনের জাহাজের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ বলছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

rai

এদিকে মার্কিন নৌবাহিনীর জয়েন্ট টাইফুন সতর্কীকরণ কেন্দ্র ইতোমধ্যে ‘রাই’-কে সুপার টাইফুন ঘোষণা করেছে। হতাহত এড়াতে ভিসায়েসের ৩০ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠানো হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলের আরও ১৭ হাজার লোককে উদ্ধার করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের বহু মানুষ সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে দেশটির সরকার।

উল্লেখ্য, গত অক্টোবরে দেশটির ঘূর্ণিঝড়ে অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়।


বুধবার বার্লিনের আদালত এক রাশিয়ার নাগরিককে আজীবন বন্দি থাকার নির্দেশ দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৯ সালের ২৩ অগাস্ট প্রকাশ্য দিবালোকে এক চেচেন জনগোষ্ঠীর মানুষকে হত্যা করেছিল সে। বার্লিনেই সেই ঘটনা ঘটে। যাকে হত্যা করা হয়েছিল, তিনি জর্জিয়ার নাগরিক ছিলেন।

ঘটনার পরের দিনই বার্লিনের পুলিশ হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে। দেখা যায় সে রাশিয়ার নাগরিক। জার্মানিতে নাম গোপন করে সে থাকছিল। তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, ওই ব্যক্তির সঙ্গে রাশিয়ার দূতাবাসের দুই কূটনীতিকের যোগাযোগ ছিল। বস্তুত, তাদের নির্দেশেই এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে আদালতে জানিয়েছে পুলিশ। নাম বদলে ওই কূটনীতিকদের সঙ্গে জার্মানির একাধিক সীমান্তে হত্যাকারী গেছে বলেও আদালতে দাবি করে পুলিশ।

আদালতের রায়ের পরেই জার্মানির নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বেয়ারবক রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সার্গেই নেচায়েভকে ডেকে পাঠান। জার্মানি এই ধরনের বিষয় বরদাস্ত করবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন তিনি। একই সঙ্গে ওই দুই রাশিয়ার কূটনীতির বিরুদ্ধে পার্সোনা ননগ্রাটা বা বহিষ্কারের নির্দেশ দেন তিনি। বেয়ারবক জানিয়েছেন, মস্কোর সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা করতে চায় জার্মানি। জার্মানির মাটিতে এই ধরনের ঘটনা ঘটানো যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। তার অভিযোগ, ওই হত্যার ঘটনার সঙ্গে সরাসরি রাশিয়ার গোয়েন্দা বিভাগ এফএসবি জড়িত ছিল।

রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া

জার্মানির এই নির্দেশে ক্ষুব্ধ রাশিয়া। রাষ্ট্রদূত সার্গেই নেচায়েভ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জার্মানির এই নির্দেশের সঙ্গে মস্কো সহমত নয়। অভিযুক্ত হত্যাকারী উচ্চতর আদালতে আপিল করেছে। যে প্রক্রিয়ায় বার্লিন দুই কূটনীতিককে বিতাড়িত করেছে, তা ঠিক নয়। আন্তর্জাতিক কূটনীতি নয়, ব্যক্তিগত রোষ থেকেই জার্মানি এ কাজ করেছে। এভাবেই জার্মানি সহ পশ্চিমা দেশগুলি রাশিয়ার উপর চাপ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। এই ঘটনা তারই অন্যতম নিদর্শন।

রাশিয়া যে জার্মানির এই নির্দেশ ভালো চোখে দেখছে না, তা এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছে মস্কো। এখন দেখার জার্মানির নির্দেশের পর রাশিয়াও জার্মান রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠায় কি না।



রিপন হোসেন
বাংলা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
আজ আমরা সেই সব আলোকিত মানুষ কে স্মরণ করছি যাদের আলোর পরশে এসেছে মুক্তমনে বাঁচার অধিকার। প্রাণের মায়া ত্যাগে যারা দিল এ বিজয় তাদের হাজারো সালাম। কত অন্তরায় কত বাঁধা পেরিয়ে এ বিজয় অর্জন। জঞ্জালে উত্তপ্ত ছিলো এ মাটি। পূর্বপুরুষদের সংগ্রামে আমরা এই দেশ পেয়েছি, তাই দেশের কল্যাণে আমাদের সবার কাজ করা উচিৎ। মানব মুক্তির যোদ্ধা আমাদের তরুণ প্রজন্মকেই হতে হবে। আমাদের হাত ধরেই তরুণ সমাজ একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়বে একদিন।

সুবর্ণা আক্তার
সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
যারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে আমাদেরকে একটি  স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিলেন তাদেরকে কেবল বিজয় দিবসে নয়, প্রতিদিনই প্রাণভরে স্মরণ করা উচিৎ।  পাশাপাশি তাদের রেখে যাওয়া আদর্শকে বুকে ধারণ করে  দেশকে  সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে উচ্চ আসনে উপস্থাপন করে শহীদদের মর্যাদা বজায় রাখতে হবে। বিজয় দিবসে এটাই আমাদের সবার প্রত্যাশা।

মেহেদী হাসান অয়ন
ফিশারিজ বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
৫০ মানেই বিশেষ একটি সংখ্যা আমাদের সবার কাছে। আর সেটা যদি হয় মাতৃভূমির বিজয়ের ৫০ বছর উদযাপনের মাহেন্দ্রক্ষণ, তাহলে তো সেটা আরও বিশেষ কিছু। বিজয়ের ৫০ বছরে পা দিয়েছে আমাদের বাংলাদেশ। কিন্তু আমরা সেই স্বাধীনতার মর্যাদা ঠিক কতোটা রক্ষা করতে পেরেছি তা একবার ভেবে  দেখার সময় এসেছে। অনিয়ম, দুর্নীতি সহ নানান ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যায় দেশের মানুষ জর্জরিত। আমাদের উচিত ভেদাভেদ ভুলে এক হওয়া। নিজেদের জায়গা থেকে এক হয়ে, ভুলগুলো শুধরে নিয়ে জাতি হিসেবে এক কাতারে দাঁড়ালেই হয়তো আমরা একদিন বিজয়ের আনন্দ ষোলো আনা উপভোগ করতে পারব।

 

মো. আরিফ হাসান
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আমার কাছে বিজয় মানে স্বাধীন দেশের প্রতিটা নাগরিকের স্বপ্নপূরণ। একাত্তরের সেই নতুন সূর্যোদয়ের পর আমার এই প্রিয় দেশটা পেরিয়েছে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর। কিন্তু এখনও আমার দেশে রোজ সূর্যোদয়ের সাথে মিশে থাকে হাজারটা স্বপ্নভঙ্গের কান্না, মিশে থাকে দূর্নীতি-দুর্দশা কিংবা বাকস্বাধীনতা হারানো নির্বাক কিছু মানুষের গল্প। কিন্তু আশার ব্যাপার হলো, আমাদের তরুণ প্রজন্ম রংতুলির আঁচড়ে প্রতিনিয়ত রাঙিয়ে চলেছেন স্বাধীন বাংলাদেশের এই সাদাকালো ক্যানভাস। ক্রিকেট বিশ্বে কিংবা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি —সব বিষয়েই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে এনে দিচ্ছেন একের পর এক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে আমাদের তরুণ প্রজন্মই সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এই দেশটাকে সোনার বাংলাদেশে পরিণত করতে পারবে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এটাই প্রত্যাশা।

 

মোঃ আশিকুর রহমান
আইবিএ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকৃত বিজয় তখনই অর্জিত হবে, যখন দেশের সকল মানুষের মৌলিক অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে পারবো। আজ বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পরে এসেও ফুটপাথে মানুষ না খেয়ে ঘুমায়, প্রচন্ড শীতের রাতে ছিন্নমূল মানুষ অসহায়ের মতো দিনযাপন করে, এখনও দেশের সকল শিশুকে শিক্ষার আওতায় আনা যায় নি। আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে আমাদের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বিজয়ের নতুন ভোরে আমরা সকলেই যেন এক হয়ে আমাদের আশেপাশের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য এগিয়ে আসার শপথ নিতে পারি। সকলে মিলে একসাথে সামনে এগিয়ে যাওয়াতেই প্রকৃত বিজয়। প্রতিটা মানুষের মাঝে বিজয়ের ছোয়া লাগুক। ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্রতা মুক্ত নতুন এক বাংলাদেশ গড়ে উঠুক এটাই কামনা।

 

নোশিন তাহসিন সাজ
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আমার কাছে বিজয় মানে নিজেদের ভূমি চিনতে শেখা। সেই ভূমির প্রতিটি কোণায় স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারার মঞ্চ তৈরি হওয়া। কারণ কথাদের কখনো মেরে ফেলা যায় না। মেরে ফেলা যায় না আমাদের মস্তিষ্কজাত শক্তিশালী শব্দগুচ্ছকে। যখন আমরা কথা বলতে জানব, তখনই হবে আমাদের বিজয়। একটা কথার ফুলকি উড়েই বারুদ হয়ে হয়ে ফুটবে। সারা শহর উথাল-পাথাল হয়ে ভীষণ রাগে যুদ্ধ হবে। নবারুণ যেমন বলেছেন, ঠিক তেমনি। মানুষ চিনে নিতে শিখবে, বুঝে নিতে শিখে কোনটা তাদের প্রাপ্য। ওটাই বিজয়। মানুষের বিজয়। ওটাই নতুন ভোর। যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে প্রাণ দিয়েছিল, দিচ্ছে এবং দেবে, তারা আমাদের মাঝে ফিরে আসবে ঠিক সেই ভোরেই।

 

নাজমুন নাহার জেমি
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৭১ সালে মা-বোনেরা দেশের জন্য নিজেদের সতীত্ব হারিয়ে ছিল যাতে আর কোনো মা-বোনের সম্ভ্রমহানি না হয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরোলেও এদেশে এখনো চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ-নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে,  মনে হয় তাহলে কি বীরাঙ্গনাদের সব ত্যাগ-তিতিক্ষা বৃথা হয়ে যাচ্ছে!  স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা চাই দেশে যেন নীরারা নিরাপদ থাকে। আর  কোনো নারী যেন নির্যাতন, ধর্ষণের শিকার না হয়।

 

জুবায়েদ মোস্তফা
লোক প্রশাসন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
আমাদের বিজয় তখন স্বার্থক হবে, যখন মত ভেদাভেদের অযুহাতে কারো জীবন অন্ধকারে পতিত হবে না, বন্ধ হবে সমস্ত প্রতিহিংসার পারদ, প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের মত করে তৈরি হবে সোনার বাংলাদেশ। আমি চাই, বাংলাদেশ মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হোক। ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্ম নেয়া সন্তান যেমন মায়ের কাছে সমান। তদ্রুপ এ দেশে জন্ম নেয়া সকল ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী, পেশার মানুষ যেন সমান অধিকার চর্চা করতে পারে এ বিষয়টি নিশ্চিত হোক।

 

মোমেনা আক্তার
বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলার বীর যোদ্ধারা যে স্বাধীন মাতৃভূমি আমাদের উপহার দিয়ে গেছে সেই স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্ব এই প্রজন্মের তারুণ্যের হাতেই। স্বাধীনতা মানে শুধু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকেই বুঝায় না। 
ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে । তাইতো উঁচু-নিচু, জুলুম-শোষণ, দুর্নীতি -দুঃশাসন, দলীয় সংকীর্ণতা প্রভৃতিকে দূরে রেখে শান্তিপূর্ণ ও সম্ভবাময় বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। বিজয়ের মাস জন্মের মাস, জন্মের মতোই নিষ্পাপ হয়ে উঠুক বাংলাদেশের প্রতিটি প্রাণ থেকে ধূলিকণা পর্যন্ত।

 

খায়রুল ইসলাম
ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ আজ বিজয়ের ৫০ বছরে পদার্পণ করেছে অথচ  বিজয়ের স্বাদ পুরোপুরি নিতে পেরেছে গুটিকয়েক মানুষ, বাকিরা রয়ে গেছে অনেক দুরে।আজ এই বিজয়ের স্বাদ ঘরে ঘরে মেহনতী মানুষের দ্বারে পৌঁছে  দিতে যাদের জাদুমন্ত্রের মত প্রয়োজন, তারা হল দেশের তরুণ প্রজন্ম । এই তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে তার কাঙ্খিত স্বপ্নের দ্বারে। তরুণদের উদ্দীপ্ত চেতনা বাংলাদেশের বিজয়কে নতুন রুপে অবতীর্ণ করবে। 

 

জেবা সামিহা তমা
হারাগাছ সরকারি কলেজ
নিজেদের বিজয় অর্জনের ৫০ বছর পূর্ণ হলো আজ। আমরা পুরো একটা জাতি নিজেদের অধিকার পেয়েছি৷ কিন্তু এখনো বোধহয় নিজেদের অর্জন করা অধিকার সুষ্ঠু বণ্টনে কিংবা বাস্তবায়নে কিছুটা হলেও আমরা ব্যর্থ। হ্যাঁ, এটা জানি যে সব কিছুই শতভাগ শুদ্ধ হয় না। কোথাও না কোথাও কমতি থেকেই যায়। কিন্তু যেটুকু কমতি থেকে যায় সেটা কতটা প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে ভাবা প্রয়োজন।  আমার মনে হয় প্রত্যেক ব্যক্তি না হোক, অন্তত বেশিরভাগ মানুষই যদি এ নিয়ে ভাবে তবে আমাদের বিজয় ও গৌরবের অর্জন সম্পূর্ণ হবে।

 

ফারিহা আলম লাবণ্য 
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
কত শত বাঁধা পেরিয়ে, কত প্রাণের বিনিময়ে আমাদের এই আজকের বিজয়। বাংলার মাটিতে লুটপাট হয়েছিল মা বোনদের সম্ভ্রম। কি ভয়াবহ দিন অতিবাহিত করে, কত নির্যাতন সহ্য করে আমাদের জন্য বাংলার দামাল ছেলেরা ছিনিয়ে এনেছে এক টুকরো লাল সবুজের দেশ। পৃথিবীর সব স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা দিবস থাকলেও বিজয় দিবস থাকে না। বাংলাদেশ সেই বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী দেশ, যেটি বহু বছরের রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের পর রণাঙ্গনে শত্রুকে পরাজিত করে বিজয় অর্জন করেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এ আত্মত্যাগ আমাদের অনুপ্রেরণা, আমাদের চলার পাথেয়, আমাদের চেতনা৷



ডিসেম্বর এলেই  বিজয়ের সুবাস বইতে থাকে মনে প্রাণে। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। একাত্তরের এই দিনে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের বিজয় নিশ্চিত হয়েছিল। নানা আয়োজনে প্রতিবছরই বিজয় দিবস উদযাপন করা হলেও এবারের বিজয় দিবসের তাৎপর্য আলাদা। বাংলাদেশ এবার পা রেখে পঞ্চাশ বছরে। পঞ্চাশের উচ্ছাসের এই জোয়ার বইছে তরুণদের মনেও। সকল বাঙালি ও সকল বাংলা ভাষাভাষি মানুষের কাছেই দিনটি আনন্দের। বিজয়ের এই দিনে ইত্তেফাক অনলাইনের সঙ্গে আলাপে নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন কয়েকজন তরুণ। নিজ নিজ অবস্থান থেকে তারা তাদের ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন।

তরুণ কথাশিল্পী ও সাংবাদিক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘নয় মাস যুদ্ধের পরে একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। অর্জিত সেই স্বাধীনতা নানাভাবে হরণ করার চেষ্টা করেছে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি। স্বাধীন দেশে স্বপরিবারে প্রাণ দিতে হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। নানাবিধ চক্রান্ত মোকবিলা করে বাংলাদেশ পঞ্চাশ বছর পূর্তি উদযাপন করছে। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত। আসুন আমরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার মান অক্ষুণ্ণ রাখার শপথ করি। সব ধরনের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়ে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধ হই।'

তরুণ পুষ্টিবিদ ও সংগঠক আজমেরী রহমান সিন্থিয়া বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাবনা ছিল—একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়তে হলে চাই স্বাস্থ্যবান জাতি। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য খাতকে শুধু গুরুত্ব দিয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি, ব্যাপক সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। কয়েকটি পদক্ষেপের মধ্যে ১ টি হচ্ছে—সংবিধানে স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা পাওয়াকে মৌলিক অধিকার এবং রাষ্ট্রের কর্তব্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই সুরে তাল মিলিয়ে বলতে চাই, বিজয়ের ৫০ বছরের পূর্তিতে যাতে এ দেশের আনাচে কানাচে পুষ্টি ছড়িয়ে পড়ে সেই লক্ষ্যে সরকারীভাবে পুষ্টিবিদ নিয়োগ করা হোক। উন্নয়নশীল দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার মূল নীতি হলো, ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর’। তাই স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়নে পুষ্টিবিদরাও মানুষকে সঠিক ও পুষ্টিকর খাদ্য নির্বাচন করতে সাহায্য করার মাধ্যমে ভূমিকা রাখতে পারেন। এর মাধ্যমে দেশ রূপান্তরিত হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশে।'

সামাজিক সংগঠক ও আলোর প্রদীপের চেয়ারম্যান এম এম মেহেরুল বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, মুক্তির দিবস। বিজয় দিবস আসলে আমাদের ভাবনা মনের হৃদয়ে উঁকি দিতে থাকে। আমার ভাবনা হলো সব ধরনের বৈষম্যহীন একটি নিরাপদ দেশ। যেখানে জাতি ধর্ম-বর্ণ সকলে সকল ভেদাভেদ ভূলে এক হয়ে এক কাতারে দাঁড়িয়ে সোনার বাংলা গড়তে মনোযোগী হবে। স্বাধীন দেশ হবে মানুষের জন্য নিরাপদ। মাথার উপরের এক আকাশ আর পায়ের নিচের একই মাটির মানুষের মধ্যে থাকবে না কোনো দ্বন্দ্ব। সকল মানুষ অন্ন পাবে, বাসস্থান পাবে, সুচিকিৎসা পাবে, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আদর্শ জাতি গঠনে মনোযোগী হবে। ধর্মান্ধতার বীজ মূলোৎপাটন করে দেশটা হবে সকল মানুষের। এত কষ্টে অজির্ত বিজয়ের কেবল তখনই পূর্ণ মূল্যায়ন করা হবে যখন নিজেরা নিজেদের আপন ভাবতে পারব।

নাট্যকর্মী সিজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম তারুণ্য নির্ভর সম্ভাবনাময় দেশে পরিণত হয়েছে জন্মের পঞ্চাশ বছরে এসে। দেশি বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় বারবার লক্ষ্যচ্যুত হয়েছে ভৌগলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ ভূখণ্ড। পাঁচ দশকে রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা এবং অনৈক্যের বলি হয়েছে তরুণরা।  বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে এই তরুণ প্রজন্মকে কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। দেশের লাখ লাখ উচ্চ শিক্ষিত বেকারসহ সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে সরকারি এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিলে আগামী বিশ বছরেই উন্নতির চরম শিখরে যেতে পারে বাংলাদেশ। পাঁচ দশকে অনেক বড় বড় সফলতা অর্জিত হয়েছে যা অস্বীকার করা অনুচিত। কিন্তু এত বড় বড় উন্নয়ন ম্নান হয়ে যায় রাজনৈতিক অস্থিরতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সাম্প্রদায়িক ও কুচক্রী মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকারকারী মহলের অপতৎপরতায়। বিভেদ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অসাম্প্রদায়িক, অপসংস্কৃতিমুক্ত, সুখি ও স্বনির্ভর দেশ গঠনে নাগরিক দায়িত্ব পালন করতে রাষ্ট্র তরুণদের কাজে লাগাবে এটাই সুবর্ণজয়ন্তীর প্রত্যাশা।

সমাজকর্মী রাশেদুজ্জামান রণ বলেন, ‘সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের অগ্রগতি সন্তোষজনক। তবে দেশের মানুষের নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত চাহিদা আমাকে কিছুটা ভাবিয়ে তুলেছে। আশাকরি পরবর্তী প্রজন্ম নীতি ও আদর্শ মেনে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে। আমাদের ছোট ছোট পদক্ষেপে সাফল্য আসবে। লাল-সবুজ আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠবে বিশ্ব দরবারে। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।’

তরুণ শেফ আসিফ রাহী বলেন, ‘বাংলাদেশ সারা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একটি উন্নয়নশীল দেশ। কিন্তু আমরা শুধু তরুণ প্রজন্মকে দোষারোপ করতেই অভ্যস্ত। আর তাদের দোষ একটাই এই যে, ২০-২৫ বছর বয়সে তাদের কাজের অভিজ্ঞতা শূন্যের কোঠায়, অপরদিকে তাদের কাছে চাকরির জন্য চাওয়া হয় ৮-১০ বছরের অভিজ্ঞতা। আর এ সকল কিছুর সংঘাতে যখন উচ্চ শিক্ষার জন্য সে বিদেশে গমন করে এর পাশাপাশি কাজও করা শুরু করে তখন আমরা এর জন্য অনুশোচনা করি। আসুন সময়ের সাথে নিজেদের মানসিকতা পরিবর্তন করে তরুণ প্রজন্মকে আগলে রাখতে শুরু করি। এটাই বিজয় দিবসে আমার চাওয়া।'

তরুণ গল্পকার সাকি সোহাগ বলেন, 'বিজয়ের অর্ধশতবর্ষী বাংলাদেশকে অভিনন্দন। দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে পরা একটি লাল সবুজ যেভাবে এগিয়ে এসেছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে সেটাই অব্যাহত থাকুক। দেশের শিল্প কলকারখানাগুলোয় বিনিয়োগ যেভাবে বেড়ে চলছে তাতে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশে অগ্রসর হতে যাচ্ছে এবং হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিকচক্র বেশ মজবুত হচ্ছে। বেলাশেষে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রায় দেশের কৃষি খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। সরকারিভাবে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তবেই বাংলাদেশের এগোনোটা আরও সহজ সমৃদ্ধ হবে বলে আমি আশাবাদী। পঞ্চাশে পদার্পণ করা বাংলাদেশের এই এগিয়ে যাওয়া, এই উন্নয়নধারা অব্যাহত থাকুক এই কামনা করছি।'

গণমাধ্যমকর্মী খালিদ সাইফুল্লাহ্ বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমার একমাত্র প্রত্যাশা এদেশ দুর্নীতিমুক্ত হোক। ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে এসেছে আমাদের এই স্বাধীনতা। একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসে দেশের প্রায় সকল সেক্টরে দুর্নীতি ও অনিয়ম দেখতে দেখতে এই প্রবাদটিই আমার মনে পড়ছে। ১৯৭১ সালে যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাগণ বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছেন সেই সোনার বাংলাদেশ আমরা এখনো পাইনি। আমরা এখনো উন্নত নাগরিক সেবা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত। দুর্নীতি, অনিয়ম এবং প্রাপ্য সুযোগের অভাবে দেশের মেধাবীরা পাড়ি জমাচ্ছেন বিদেশে। দেশের সামগ্রিক অবস্থার পরিবর্তন না ঘটলে এই ধারা চলতেই থাকবে। তাই বিজয়ের পঞ্চাশে আমার একমাত্র প্রত্যাশা এদেশ দুর্নীতিমুক্ত হোক।'

লেখক নূরে জান্নাত বলেন, ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পার করে একান্নতে পা দেবে সোনায় মোড়ানো আমার মা, ভালোবেসে সোনার বাংলা ডাকি আমরা সব সন্তানেরা, সংক্ষেপে বাংলা। বাংলাকি সত্যিই সোনার আছে? নাকি ক্ষুধা, দারিদ্রতা, ধর্ষণ, বেকারত্ব, হানাহানি, দূর্নীতি, অনিয়মের আগুনে পুরে ছাই! যে শান্তি ও সমতার স্বপ্ন নিয়ে ত্রিশ লক্ষ ভাইয়েরা শহীদ হলো, দুই লক্ষ মায়েরা সম্ভ্রম হারালো, সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল স্বাধীনতার এই এত পথ পেছেনে ফেলে আসার পরেও। স্বধীনতা শব্দটা পরাধীন এই সকল সমস্যার কাছে। বিজয়ের গৌরব অটুট থাকুক ক্ষুধা, দারিদ্রতা, বেকারত্ব, ধর্ষণ, হানাহানি, দূর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ হয়ে। হাসি থাকুক সবার মুখে এই বিজয়ে।'

সবাই তাল মিলিয়ে বলেছেন, সোনার বাংলাদেশ হোক ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত। হোক অসম্প্রদায়িক চেনার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যেখানে বসবাস করবে সকল ধর্মের বর্ণের শ্রেনীর মানুষ। যেখানে থাকবেনা কোনো দুর্নীতি, খুন খারাপি, সন্ত্রাসী রাহাজানী। বিজয়ের পঞ্চাশে এইটাই সকলের চাওয়া। বাংলাদেশ দীর্ঘজীবি হোক।


সূত্রঃ ইত্তেফাক


আজ বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখন্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সাল থেকে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ এর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চে গণহত্যা শুরু হলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদ ও দু’লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক সেনাদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। সেই হিসাবে বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তির দিন আজ। 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন উপলক্ষে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ প্রতিপাদ্যে আজ থেকে দুই দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি এ আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানমালার ১ম দিন আজ অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল সাড়ে ৪টায় এবং অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিচালনায় থাকবে সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শপথ। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে জাতীয় পতাকা হাতে দেশের সর্বস্তরের মানুষ এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। শপথ গ্রহণ শেষে আলোচনা পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সম্মানীয় অতিথির বক্তব্য রাখবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী রাম নাথ কোবিন্দ। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক এবং স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং স্বাগত বক্তব্য রাখবেন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। এ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা সম্মানীয় অতিথিকে “মুজিব চিরন্তন” শ্রদ্ধাস্মারক প্রদান করবেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। 

জাতীয় পর্যায়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত সদস্যগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

এছাড়া, সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরস্থ জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমভিত্তিক যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত হবে। 

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি পরাধীনতার শেকল ভেঙে প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করে। ২৪ বছরের নাগ পাশ ছিন্ন করে জাতির ভাগ্যাকাশে দেখা দেয় এক নতুন সূর্যোদয়। প্রভাত সূর্যের রক্তাভা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। সমস্বরে একটি ধ্বনি যেন নতুন বার্তা ছড়িয়ে দেয় ‘জয়বাংলা’ বাংলার জয়, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল। মহামুক্তির আনন্দ ঘোর এই দিনে এক নতুন উল্লাস জাতিকে প্রাণ সঞ্চার করে সজিবতা এনে দেয়। যুগ যুগ ধরে শোষিত বঞ্চিত বাঙালি চোখে আনন্দ অশ্রু আর ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় সামনে। বিন্দু বিন্দু স্বপ্নের অবশেষে মিলিত হয় জীবনের মোহনায়। বিশ্ব কবির সোনার বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ, জীবনানন্দের রূপসী বাংলা, রূপের তাহার নেইকো শেষ, বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ। বাঙালি যেন খুঁজে পায় তার আপন সত্তাকে।
আদি বাঙালির সাংস্কৃতিক ও আর্থ-সামাজিক জীবন এবং ক্রমবিকাশের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে বাঙালির শৌর্য-বীর্য যেন আর একবার ধপ করে জ্বলে উঠে। প্রথম আগুন জ্বলে ’৫২-র একুশে ফেব্রুয়ারি। ফাগুনের আগুনে ভাষা আন্দোলনের দাবি আর উন্মাতাল গণমানুষের মুষ্টিবদ্ধ হাত একাকার হয়ে যায় সেদিন। ভাষার জন্য প্রথম বলীদান বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করে। সেই থেকে শুরু হয়ে যায় বাঙালির শেকল ভাঙার লড়াই। পাকিস্তানিদের সঙ্গে হিসেব-নিকেশের হালখাতার শুরুতেই রক্তের আঁচড় দিয়ে বাঙালি শুরু করে তার অস্তিত্বের লড়াই। পলাশীর আম্রকাননে হারিয়ে যাওয়া সেই সিরাজদ্দৌলা আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রূপে এ লড়াইয়ে সেনাপতি হিসেবে আবির্ভূত হন। ’৫২ সালে যে আগুন জ্বলেছিল রাজধানী ঢাকা শহরে সে আগুন যেন ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে দেশের আনাচে-কানাচে সবখানে। যে আগুন জ্বলেছিল মোর প্রাণে, সে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে সবখানে সবখানে। বাঙালির বুকের ভেতর জ্বলে উঠা আগুন যেন সহস্র বাঙালির মধ্যে প্রবাহিত হতে থাকে।

বাষট্টি, ঊনসত্তর এবং সত্তর শেষ করে একাত্তরে বাঙালি জাতি হিসাব করতে বসে। হিসেব-নিকেশ আর দেনা-পাওনায় পাকিস্তানিরাও বসে নেই। তারাও অংক কষতে থাকে কিভাবে বাঙালি জাতিকে যুগ যুগ ধরে পরাধীনতার শেকল পরিয়ে রাখা যায়। তাদের কাছে এই অলংকারই বাঙালির শ্রেষ্ঠ প্রাপ্য। ঘড়ির কাঁটার টিক টিক শব্দ জানিয়ে যায় সময় আসছে হিসেব নিকেশ চুকিয়ে দেওয়ার পালা।

অবশেষে গভীর কালো নিকষ আঁধার থেকে জেগে উঠে হিরন্ময় হাতিয়ার। ৭ মার্চ একাত্তরের বিশাল জনসমুদ্র থেকে যুগের কবি, মহাকাব্যের প্রণেতা বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠ ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। রক্ত যখন দিয়েছি তখন আরো দেব, তবুও এদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এই একটি মাত্র উচ্চারণে যেন বাঙালি সত্যিকার দিক-নির্দেশনা পেয়ে যায়। চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকে বাঙালি। বাঙালি বুঝে যায় শেষ কামড় দেওয়ার সময় আসন্ন। পাকিস্তানিরাও আর বসে নেই। পুরো জাতিকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে মারাত্মক মারণাস্ত্র নিয়ে ২৫ মার্চ একাত্তর ঘুমন্ত জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় বাঙালি নিধন যজ্ঞ। বাতাসে লাশের গন্ধ, বারুদে বারুদে আর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আকাশ। এ যেন এক প্রেতপুরী। আকাশে শকুনের উদ্যত থাবা, নিচে বিপন্ন মানুষের বিলাপ। হায় বাংলাদেশ। একি বাংলাদেশ। এ যেন এক জ্বলন্ত শ্মশান। কিন্তু ঠিকই হাড়ের আর খুলির স্তুপ একদিন পাললিক হয়।

মুক্তি পাগল বাংলার দামাল ছেলেরা স্বাধীনতার রক্ত সূর্যকে ছিনিয়ে আনবে বলে একদিন অস্ত্র কাঁধে তুলে নেয়। ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার সবাই শরিক হয়ে থাকে এ লড়াইয়ে। যতই দিন অতিবাহিত হতে থাকে আরো শাণিত হয় প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র। লক্ষ্য স্থির রেখে শত্রু হননে দৃঢ়তায় এগিয়ে যায় বীর বাঙালি। ইতোমধ্যেই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন স্পষ্ট হয়ে উঠে। প্রতিবেশী ভারতও জড়িয়ে পড়ে বাঙালির ভাগ্য যুদ্ধে। ডিসেম্বর শেষ পর্যায়ে এসে চূড়ান্ত রূপ নেয় এই যুদ্ধের।

অবশেষে ন’মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে এলো নতুন প্রভাত। ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সূচিত হল মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্য বিজয়। এর মধ্য দিয়ে এলো হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। বাঙালি জাতি এদিন অর্জন করে তার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের অধিকার। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ ধর্ষিতা মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা ধরা দেয় বাঙালির জীবনে।


বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান বন্ধুত্বকে আরও সুসংহত করার বার্তা দিয়েছেন সফররত ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ অভিন্ন বার্তা দেন। সরকার প্রধানের সঙ্গে আলোচনায় যেকোনো প্রয়োজনে বরাবরের মতো ভারত বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন দেশটির রাষ্ট্র প্রধান। ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতের প্রেসিডেন্ট বুধবার সকালে ঢাকা আসেন। প্রথম দিনটি তিনি সিরিজ কর্মসূচিতে কাটিয়েছেন। এদিনের তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি ছিল প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক। বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ভারতের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান। সন্ধ্যায় বৈঠক হয় দুই প্রেসিডেন্টের।

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে সহায়তা কামনা: ওদিকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন। এ ছাড়া আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের সমস্যাগুলো নিরসনের অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। বুধবার ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন এ কথা জানান।
রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। বৈঠক শেষে ড. আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে বলেছি, ভারতের সঙ্গে আমাদের গত ৫০ বছরের সুসম্পর্ক রয়েছে। আমরা একে অপরকে সহায়তা করেছি, করছি। আগামী ৫০ বছরও একে অপরকে সহায়তা করে উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে চাই। তিনি বলেন, করোনাকালে আমাদের উনারা সহায়তা করেছেন, সেজন্য আমরা উনাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী, মুজিববর্ষের সমাপনী এবং দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভারতের প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফর করছেন।

শেখ হাসিনার জন্য মিষ্টি ও কেক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য উপহার হিসেবে মিষ্টি, কেক আর বিস্কুট নিয়ে এসেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, যা তৈরি হয়েছে তারই বাসভবনে। শেখ হাসিনা বুধবার বিকালে রাজধানীর একটি হোটেলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তাকে এই উপহার দেন কোবিন্দ। এর আগে ‘সুস্বাদু ও মিষ্টি’ আম উপহার পাঠানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগে রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। পরে সাংবাদিকদের সামনে বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরেন তারা।

প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, গতবার আম পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেছেন, সেগুলো খুব সুস্বাদু, ও মিষ্টি ছিল। প্রধানমন্ত্রীর জন্য উনি উনার রাষ্ট্রপতি ভবনে নিজেদের তৈরি করা মিষ্টি, কেক এবং বিস্কুট নিয়ে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী যেন নিজে সেগুলো গ্রহণ করেন, সেই অনুরোধ তিনি করেছেন।

বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা উনাকে বলেছি, আমাদের দু’দেশের মধ্যে যে সোনালী অধ্যায়, সেটা অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয়। আমরা সব ধরনের বড় বড় সমস্যা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান করেছি। আমি বলেছি, আগামী ৫০ বছরে বিভিন্ন দিকে মিউচুয়ালি একে অপরকে সাহায্য করে আমরা সবাই উন্নতির শিখরে পৌঁছাবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ‘অভাবনীয় সাফল্যের’ কথাও আলোচনায় স্থান পেয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমাদের কানেক্টিভিটির কথা আমরা তুলে ধরেছি। আমরা বলেছি, ভারতের সঙ্গে আমাদের গভীর সম্পর্ক। এই সম্পর্কের ফলেই এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অব্যাহতভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের কোঅপারেশন এই রিজিওনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে এবং আরও অনেক দূর যাবে। গরিবি হটানোতে আমাদের দু’দেশের কোঅপারেশন আরও দরকার।

শাহরিয়ার আলম বলেন, ভারতের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যাওয়ায় তাকে ধন্যবাদ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন: বুধবার দুপুরে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ঘুরে দেখে তিনি জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

জাদুঘরের কিউরেটর এন আই খান গণমাধ্যমকে জানান, দুপুর সোয়া ১টার দিকে সেখানে পৌঁছান ভারতের রাষ্ট্রপতি। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা তাকে জাদুঘরে স্বাগত জানান এবং ঘুরিয়ে দেখান বঙ্গবন্ধুর বাড়ি। এ সময় উপহার হিসেবে বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’সহ কয়েকটি বই ভারতের রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেন শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ঘুরে দেখার পর পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিববর্ষের আয়োজনে যোগ দিতে তিনদিনের সফরে বুধবার সকালে ঢাকায় পৌঁছান তিনি। এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান ফ্লাইটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সেখানে ভারতীয় রাষ্ট্রপতিকে গালগালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেয়া হয়। এরপর সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ধানমণ্ডিতে যান কোবিন্দ।

স্মৃতিসৌধে রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে তার স্ত্রী ভারতীয় ফার্স্ট লেডি সবিতা কোবিন্দ ও তাদের মেয়ে স্বাতী কোবিন্দ ছাড়াও ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে ২১ বার তোপধ্বনি দিয়ে রামনাথ কোবিন্দকে স্বাগত জানানো হয়। তিন বাহিনীর সুসজ্জিত একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার দেয়। দেয়া হয় লাল গালিচা সংবর্ধনা। গার্ড পরিদর্শনকালে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে লাইন অব প্রেজেন্টেশনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

আজ ও কালকের কর্মসূচি: সফরের দ্বিতীয় দিন আজ (১৬ই ডিসেম্বর) জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ভারতের  প্রেসিডেন্ট ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্‌?যাপন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এরপর বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীর ঐতিহাসিক মুহূর্তে ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, স্পিকারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশ নিবেন। সফরের তৃতীয় দিন (১৭ই ডিসেম্বর) ভারতের প্রেসিডেন্ট ঢাকার রমনাস্থ কালীমন্দিরে যাবেন। সেখানে সদ্য সংস্কারকৃত অংশের উদ্বোধন এবং মন্দির পরিদর্শন করবেন। মন্দির সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময়ের আগ্রহও রয়েছে তার। রমনা থেকে ফিরে দুপুরেই দিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন রামনাথ কোবিন্দ।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্কতা দিয়েছে, করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট অমিক্রন অবিশ্বাস্য হারে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বের ৭৭টি দেশে এ পর্যন্ত নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানোম গেব্রিয়াসুস বলেছেন, হয়তো আরো অনেক দেশেই ছড়িয়েছে এই ভ্যারিয়েন্ট যা এখনো শনাক্ত হয়নি।

ড. টেড্রোস বলেছেন, এই ভ্যারিয়েন্ট মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সব কিছু করা হচ্ছে না, যা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।

তিনি বলেন, "আমরা এখন নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারছি যে এই ভাইরাসকে শুরুতে একেবারেই গুরুত্ব দেইনি আমরা। এখন অমিক্রন যদি অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর রোগও হয়ে থাকে, আক্রান্তের হারে যে ঊর্ধ্বগতি তার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রস্তুত নয়, ফলে আবারো পুরো পৃথিবীর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একটি বেকায়দায় পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।"

অমিক্রন টেস্ট

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টকে অতি সংক্রমণশীল এবং সারা বিশ্বে এই ভ্যারিয়েন্ট প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে, কিন্তু এর লক্ষণগুলো খুবই মৃদু। নভেম্বরে প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকাতে অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়, এবং দেশটিতে এখনো পর্যন্ত নতুন ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সেরিল রামাফোসা কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন, এবং তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে এবং এখন তার শরীরে মৃদু উপসর্গ রয়েছে।

অমিক্রনের কারণে বিশ্বের অনেক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকাতে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, ফলে চাপে পড়েছে দেশটির অর্থনীতি।

কিন্তু ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে অমিক্রনের ছড়িয়ে পড়া আটকানো যায়নি।

মঙ্গলবারের ওই সংবাদ সম্মেলনে ড. টেড্রোস ভ্যাকসিন পাবার ক্ষেত্রে দেশে দেশে বৈষম্যের বিষয়টি আবারো তুলে ধরেন।

অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার ঠেকাতে অনেক দেশই এখন বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু করছে।

ফাইজার/বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন নিয়ে করা এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এটি মূল স্ট্রেনের তুলনায় অমিক্রনের বিরুদ্ধে অনেক কম নিরপেক্ষ অ্যান্টিবডি তৈরি করে।

কিন্তু এই ঘাটতি তৃতীয় একটি ডোজ বা বুস্টার ডোজের মাধ্যমে মেটানো সম্ভব।

ড. টেড্রোস বলেছেন, করোনাভাইরাস-১৯ ঠেকাতে ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ 'গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে', কিন্তু 'গুরুত্বের বিচারে কাদের দেয়া হবে তা নির্ধারণ' সেটাই মূল প্রশ্ন।

এয়ারপোর্ট

তিনি বলেন, "অসুখবিসুখ বা মৃত্যু ঝুঁকি কম রয়েছে এমন মানুষকে বুস্টার দেয়া হলে, যারা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন কিন্তু টিকার সরবারহ পাচ্ছেন না বলে এখনো প্রথম ডোজ টিকাই দিতে পারেননি, তারা মারাত্মক বিপদে পড়বেন।"

টিকা শেয়ার করার বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভ্যাকসিনের যোগান বাড়িয়েছে।

কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তাদের আশংকা অচিরেই আবারো টিকার ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

চলতি বছরের মাঝামাঝি ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পর দেশটি টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বিশ্বে টিকার যোগানে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছিল।

বিশ্বের অনেক দরিদ্র দেশে এখনো অনেক মানুষ এক ডোজ টিকাও পাননি।


র‌্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপকে ঘিরে দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফোনে বিজয় দিবসের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিতে তাঁর আগ্রহের কথা জানান এবং মোমেনকে যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ জানান।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন যুক্তরাজ্য, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও হাওয়াইয়ে গত ৯ ডিসেম্বর ৯ দিনের সফরে আছেন। তাঁর ওই বিদেশ সফরের মধ্যে গতকাল সকালে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ঢাকায় বার্তা আসে, তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে কথা বলতে চান। সন্ধ্যায় তাঁর ফোন আসে। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বঙ্গভবনে ছিলেন। তিনি সেখান থেকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ব্লিনকেনের কাছে তুলে ধরেন।

এর আগে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ও পররাষ্ট্র দপ্তর র‌্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরদিন শনিবার ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারকে তলব করে ক্ষোভ জানায় সরকার।


করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে এখনো কঠোর বিধিনিষেধ পালন করছে নিউজিল্যান্ড। এর মধ্যেই দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে দেশটিতে সফরে গিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। নিয়ম অনুযায়ী, কোয়ারেন্টিনও পালন করছে তারা। তবু, করোনার প্রভাব থেকে রেহাই পেলো না টাইগার শিবির। স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে।

জানা গেছে, কিংবদন্তি এই স্পিনার দলের বাকি সদস্যদের মতোই কোয়ারেন্টিনে আছেন। যদিও প্রথম দুই করোনা পরীক্ষায় বাংলাদেশ দলের সবাই নেগেটিভ হয়েছিলেন। কিন্তু তৃতীয় পরীক্ষায় বিপত্তি বাঁধলো।


এদিকে, এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি নিউজিল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ধারণা করা হচ্ছে, হেরাথের কোয়ারেন্টিনের সময় আরও বাড়ানো হবে। এছাড়া বাংলাদেশ দল যে ফ্লাইটে নিউজিল্যান্ড গেছে, সেই বিমানের একজন যাত্রীরও করোনা শনাক্ত হয়েছে। ফলে তার আশপাশে বসা বাংলাদেশ দলের নয়জনেরও কোয়ারেন্টিন সময় বেড়েছে।

 

কাম্প নউয়ে বুধবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বুটজোড়া তুলে রাখার ঘোষণা দেন আগুয়েরো। ১৮ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের ইতি টানার লগ্নে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি ৩৩ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড।

“শারীরিকভাবে ভালো থাকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎকরা আমাকে বলেছেন যে, খেলা বন্ধ করাই সবচেয়ে ভালো হবে। আর তাই আমি বার্সা ছেড়ে যাচ্ছি এবং ফুটবল থেকে বিদায় নিচ্ছি।”

নতুন স্বপ্ন নিয়ে গত গ্রীষ্মের দলবদলে ম্যানচেস্টার সিটি ছেড়ে ফ্রি ট্রান্সফারে বার্সেলোনায় যোগ দেন আগুয়েরো। নতুন ঠিকানায় শুরুতেই ধাক্কা খান তিনি, ছিটকে পড়েন চোট পেয়ে।

অবশ্য ওই চোট কাটিয়ে দ্রুতই বার্সেলোনার শুরুর একাদশে জায়গা করে নেন এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। দলটির হয়ে লা লিগায় চারটি এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগে একটি ম্যাচ খেলেন তিনি। গোলের খাতাও খোলেন তিনি; একমাত্র গোলটি তিনি করেন ক্লাসিকোয় বদলি হিসেবে নেমে।

বিপত্তিটা বাঁধে গত ৩০ অক্টোবর লা লিগায় আলাভেসের বিপক্ষে বার্সেলোনার ১-১ ড্র ম্যাচে; হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করায় মাঠ ছেড়ে যান আগুয়েরো। ডাক্তারি পরীক্ষায় ধরা পড়ে, হৃদযন্ত্রের স্পন্দন জটিলতা সংক্রান্ত অ্যারিথমিয়া রোগে ভুগছেন তিনি।

ওই সময়ই তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে বলে গুঞ্জন ওঠে। স্পেনের মার্কা ও আর্জেন্টিনার টিওয়াইসি স্পোর্টসসহ কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে তখন বলা হয়, অসুস্থতার কারণে আগেভাগে বুটজোড়া তুলে রাখতে হতে পারে আগুয়েরোকে।

তবে বার্সেলোনার পক্ষ থেকে তিন মাস পর আগুয়েরোর মাঠে ফেরার সম্ভাবনার কথা বলা হয়। ক্লাবটির কোচ হিসেবে যোগ দিয়ে গত মাসে ওই সব খবরকে গুজব বলে উড়িয়ে দেন শাভি এরনান্দেস। বলেন, আগুয়েরোর মাঠে ফেরার অপেক্ষায় আছেন তিনি।

তবে সব আশাই নিরাশায় রূপ নিল। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী কাম্প নউয়ে হাজির হন আগুয়েরো। শুরুতে মনের কষ্ট চেপে রাখতে পারেননি তিনি, কেঁদে ফেলেন। একটু পরই নিজেকে সামলে নেন। শোনান, রোগ ধরার পড়ার পর থেকে জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ের কথা।

“এই কনফারেন্স ডাকা হয়েছে এটা জানানোর জন্য যে, আমি ফুটবল খেলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খুব কঠিন মুহূর্ত।”

“ক্লিনিকে আমার শরীরে প্রথম পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা আমাকে ডেকে বললেন, জোর সম্ভাবনা আছে যে আমি হয়তো আর খেলা চালিয়ে যেতে পারব না। ওই মুহূর্ত থেকেই আমি নিজেকে (আজকের দিনের জন্য) একটু একটু করে প্রস্তুত করেছি, কিন্তু এটা সহজ ছিল না। চিকিৎসকদের মধ্যে একজন আমাকে সরাসরি বলেছিলেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে’।”

এরপরই পুরনো দিনের কথা বলেন আগুয়েরো। ফুটবল স্বপ্নে বেড়ে ওঠার দিনগুলোর কথা স্মরণ করেন।

“সবাইকে বলতে চাই যে, আমি সম্ভাব‍্য সব চেষ্টাই করেছি। পাঁচ বছর বয়স থেকে এবং ফুটবলে প্রথম স্পর্শের পর থেকে আমি ফুটবল খেলার স্বপ্ন দেখেছি। কখনও ভাবিনি যে ইউরোপে খেলতে পারব। কোথায় কোথায় অনুশীলন করেছি সেটা বিষয় নয়, সবার প্রতিই আমি কৃতজ্ঞ।”

শৈশবের ক্লাব ইন্দিপেনদিয়েন্তেই সিনিয়র ক্যারিয়ার শুরু হয় আগুয়েরোর। ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সেখানে খেলে ওই বছরই ইউরোপে পাড়ি জমান তিনি, যোগ দেন আতলেতিকো মাদ্রিদ। স্পেনের দলটির হয়ে ২৩৪ ম্যাচে করে ১০১ গোল, জেতেন ২০১০ সালের ইউরোপা লিগ।

এরপর ২০১১ সালে ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দিয়ে কাটান ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সফল অধ্যায়। এখানে ১০ বছরের ক্যারিয়ারে পাঁচটি প্রিমিয়ার লিগ, একটি এফএ কাপ ও ছয়টি লিগ কাপ জেতেন তিনি। গড়েন দলটির ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড; ৩৯০ ম্যাচে ১৬ হ‍্যাটট্রিকসহ করেন ২৬০ গোল।

সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারে ৭৮৬ ম্যাচে ৪২৭ গোল করা আগুয়েরোর কণ্ঠে বিদায়বেলায় ছিল সন্তুষ্টির ছোঁয়াও।

“মাথা উঁচু রেখেই আমি বিদায় নিচ্ছি। আমি খুশি। জানি না, পরবর্তী জীবনে আমরা জন্য কী অপেক্ষা করছে। জানি, অনেক মানুষ আমাকে ভালোবাসে এবং আমার জন্য সর্বোচ্চ ভালোটাই চায়।”

দেশের ফুটবলেও বেশ সফল আগুয়েরো। তিনটি বিশ্বকাপে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা এই ফরোয়ার্ড আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে মোট ১০১ ম্যাচ খেলে করেছেন ৪১ গোল। গত জুন-জুলাইয়ে কোপা আমেরিকা জয়ের মধ্য দিয়ে আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের শিরেপা খরা ঘোচানোর অভিযানেও ছিলেন তিনি।

Holy Foods ads

Holy Foods ads

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget