এখন কেবল মধ্য চৈত্র। বৈশাখ আসতে প্রায় সপ্তাহ দু-এক বাকি। তাই বলে কি বর্ষবরণের চিন্তা কারও মধ্যে জাগেনি? ভাবনার দরজা এখনো খোলেনি? না, একেবারেই নয়! যাঁরা চুপ করে বসে আছেন, তারা বড্ড ভুল করবেন। কারণ এবার বর্ষবরণের আনন্দ একদিন বা দুদিনের জন্য নয়, টানা তিন দিনের। অর্থাৎ, ইংরেজির তারিখের ১৪ এপ্রিল রোববার দিন হবে পয়লা বৈশাখ। এর আগে দুদিন ১৩ ও ১২ এপ্রিল শনি ও শুক্রবার। সব মিলিয়ে টানা তিন দিনের ছুটির ফাঁদ।
ছুটির ফাঁদের পড়ে কেউ কি ইচ্ছে করে গৃহবন্দী থাকতে চাইবেন? তাই ১৪২৬ সাল বরণ নিয়ে চিন্তা-ভাবনার পর্ব শেষ হয়ে গেছে সেই কবে! এখন নববর্ষকে স্বাগত জানাতে ছুটে চলার প্রস্তুতি।
কেউ ছুটবেন সড়কপথে, কেউ যাবেন নৌপথে, কেউবা আবার আকাশপথে। তিন পথেরই টিকিট নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে। এমনকি টিকিট বিক্রিও প্রায় শেষের দিকে।
টিকিট নিয়ে সড়ক পথে দৌড়ঝাঁপের মধ্যে যাননি নাজমুর রহমান। আকাশ পথে উড়াল দেবেন বৈশাখের এই ছুটিতে চট্টগ্রামে। তাই তিনি আরও সাত দিন আগেই একটি বেসরকারি বিমান সংস্থার টিকিট পাঁচ হাজার টাকায় কিনে নিয়েছেন। নাজমুর রহমান বলেন, ‘পয়লা বৈশাখের আগে দুই দিন ছুটি। সব মিলিয়ে তিন দিনের ছুটি পাচ্ছি। এ কারণে পুরো পরিবার নিয়ে চলে যাব চট্টগ্রামে। সেখান থেকে কাপ্তাই রাঙামাটি ঘুরে ঢাকায় ফিরব ১৫ এপ্রিল সকাল বেলা। বিমানবন্দর থেকেই সোজা চলে যাব অফিসে।’
নাজমুর রহমান জানান, তিনি কোনো তাড়াহুড়া করবেন না। ১১ এপ্রিল অফিস করবেন। পরদিন ১২ এপ্রিল সকালের ফ্লাইটে চট্টগ্রাম যাবেন।
নাজমুর রহমানের মতো আরও অনেকে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণের জন্য আকাশ পথকে বেছে নিয়েছেন। এতে খরচ কিছুটা বেশি হলেও লম্বা ভ্রমণের ঝক্কি তাঁরা নিতে চাইছেন না। ছুটির পুরোটাই উপভোগ করতে চাইছেন। ফলে আকাশপথের টিকিটে চাপ পড়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক জনসংযোগ শাকিল মেরাজ প্রথম আলোকে বলেন, ছুটির দিনের হিসাব এখন মানুষ আগে থেকেই করেন। এ জন্য বিমানের টিকিটের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ আকাশপথের মধ্যে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেটে টিকিটের চাহিদা বেশি। বেশির ভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২ এপ্রিল টিকিটের দাম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১১ এপ্রিলের জন্য সকাল ও বিকেলে টিকিটের দামে হেরফের রয়েছে। বিকেলের টিকিটের দাম বেশি। সকালে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে বিমানের টিকিটের দাম সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। একই দিন বিকেলে টিকিটের দাম ছয় হাজার ১০০ টাকা।
এ ব্যাপারে বিমানের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ বলেন, এসব রুট ছাড়াও সিলেট, যশোরে টিকিটের চাহিদা রয়েছে। আর দেশের বাইরে আশপাশের অঞ্চল সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া আর কলকাতায় অনেক মানুষ পয়লা বৈশাখের ছুটি কাটাতে বিমানের টিকিট কিনছেন।
বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোরও বৈশাখের ছুটি উপলক্ষে টিকিটের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ইউ এস বাংলার ব্যবস্থাপক (মার্কেটিং সহায়ক ও জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে তিন দিনের ছুটি পড়ে যাওয়ায় টিকিট বিক্রি বেড়ে গেছে। ১১ এপ্রিলের বেশির ভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। এই দিন সিলেট, কক্সবাজার আর চট্টগ্রাম রুটের প্রায় সব টিকিটই বিক্রি হয়ে গেছে। মানুষ শুধু বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে যাচ্ছেন না, তারা বৈশাখের এই তিন দিন ছুটিতে নিজেদের আপন ঠিকানাতেও বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এ জন্য সৈয়দপুর, যশোরে যাত্রী চাপ রয়েছে। তিনি বলেন, এসব রুটে রিটার্ন টিকিট বা ফিরতি টিকিটের জন্য ১৪ এপ্রিল বিকেলে এবং পরদিন ১৫ এপ্রিল সকালের ফ্লাইটের টিকিটের চাহিদা রয়েছে।
সড়ক পথের যাত্রীরা বেশ কদিন আগেই টিকিট কিনে নিয়েছেন। গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনাল ঘুরে জানা গেছে, মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই অগ্রিম টিকিট কেনা শুরু করেছেন বৈশাখের ছুটি কাটানোর পরিকল্পনাকারী যাত্রীরা।
হানিফ পরিবহনের ব্যবস্থাপক মোশারফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ১১ এপ্রিল সকাল বেলার টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। তবে দুপুরের পরের কোনো টিকিট তাঁদের হাতে নেই। সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
মোশারফ হোসেন বলেন, হানিফ পরিবহনের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের রুট মিলিয়ে ১১ এপ্রিল ৩৫৫টি বাস ঢাকা ছেড়ে যাবে। সে দিনের বেশির ভাগ টিকিট কিনে নিয়েছেন যাত্রীরা।
আকাশপথ আর সড়কপথের মতো নৌপথেও অনেকে বৈশাখী ছুটি কাটাতে যাবেন। এ জন্য পটুয়াখালীর দিকে যাত্রীদের লঞ্চের টিকিটের চাহিদা বেশি। কারণ পটুয়াখালী থেকে অনেকে চলে যাবেন পর্যটন এলাকা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের চাঁদপুর, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি নৌরুটে টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে গেছে।
সুন্দরবন লঞ্চের পরিচালক মোহাম্মদ ঝন্টু প্রথম আলোকে বলেন, তারা বেশ কিছুদিন আগে থেকেই টিকিট বিক্রি করছেন। কেবিনের চাহিদা বেশি। কারণ মানুষ একটু আরাম করে এসব উৎসবের ছুটি গুলো উপভোগ করতে চায়। এ জন্য কেবিনে টিকিটের দিকেই যাত্রীরা বেশি ঝুঁকছেন।
রেলপথ ধরে ঢাকা ছাড়বেন প্রচুর মানুষ। তাই ট্রেনের টিকিটের বেশ চাহিদা রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ১১ এপ্রিলের অগ্রিম বিক্রি করা হয়। ঢাকা রেলওয়ের থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের সময়ের মতো অবস্থা ছিল গতকাল। ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন ঘরমুখী মানুষেরা। সকাল দশটার মধ্যে সব টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যায়। পরদিন ৩ এপ্রিল ১২ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হয়েছিল। এদিনও ছিল একই অবস্থা।
( prothomalo )