এশিয়ার সর্ববৃহৎ গাছে থোকায় থোকায় সুর্যপরী আম, ২ লাখ টাকা বিক্রির আশা !

 




এশিয়ার সর্ববৃহৎ গাছে থোকায় থোকায় সুর্যপরী আম, ২ লাখ টাকা বিক্রির আশা ! 


জেলার পাঁচটি উপজেলায় ছড়িয়ে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী অসংখ্য দর্শনীয় বিষয়। এর মধ্যে রয়েছে আলোচিত ঐতিহ্যবাহী ২৩০ বছরের পুরোনো সূর্যপুরী আমগাছ। ফলে এটি এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় আমগাছের স্বীকৃতি পেয়েছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর সেই আম গাছ থেকে ৮০ থেকে ১০০ মণ আম সংগ্রহের আশা করা হচ্ছে। সুর্যপুরী জাতের এই আম গাছের আম প্রতি কেজি সর্বনিম্ন ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়। সে হিসাবে ৮০ থেকে ১০০ মণ আম ২ লাখ টাকার বেশি বিক্রি করা যাবে। 

ভারতের সীমান্তবর্তী উপজেলা বালিয়াডাঙ্গীর হরিণমারী (নয়াপাড়া) গ্রামে বিশাল এ আমগাছটির অবস্থান। প্রায় ২ দশমিক ৫ বিঘাজুড়ে বিস্তৃত সূর্যপুরী গাছটি। প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ফুট উঁচু এ গাছের পরিধি প্রায় ৩৫ ফুট।

গাছটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকা লোকজন, গাছের মালিক ও দেখতে আসা দর্শনার্থীদের মতে গত ২০ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বেশি আম ধরেছে গাছটিতে। কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার না হলে প্রায় ৮০-১০০ মণ আম ফলন পাওয়া বলে আশা করছেন গাছটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা লোকজন। 



সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, প্রকৃতির আপন খেয়ালে বেড়ে ওঠা ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আজও। গাছটির বিশালাকৃতির কারণে দূর থেকে দেখলে মনে হবে এটি বিশাল একটি ঝাউগাছ। কিন্তু কাছে গেলে ধারণা বদলে যায় সবার। দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এই আমগাছ দেখার জন্য এখানে ভিড় জমায়।


বর্তমানে থোকায় থোকায় আম ধরেছে গাছটির ডালে ডালে। আমগুলো রক্ষণাবেক্ষণের ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছটি লিজ গ্রহণকারী সলেমান আলী নামে স্থানীয় এক আম ব্যবসায়ী ও তাঁর ছেলে। 

স্থানীয়রা গাছটির সঠিক কোনো তথ্য দিতে না পারলেও তাদের মতে, সূর্যপুরী জাতের এত বড় আমগাছ বাংলাদেশের আর কোথাও নেই। তাই প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় করেন গাছটি একনজর দেখার জন্য। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি থাকে বেশি। জনপ্রতি দর্শনার্থীদের কাছে নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা করে টিকিট। টিকিট বিক্রি থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে গাছটির পরিচর্যা করা হয়।



আম ব্যবসায়ী সলেমান আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩ বছরের জন্য আম গাছটি তিনি লিজ নিয়েছেন দেড় লাখ টাকায়। চলতি মৌসুমেই লিজের মেয়াদ শেষ হবে। গেল দু বছরে গাছে ভালো আম না আসায় বেশি লাভ করতে পারেনি। তবে এ বছর পুরো গাছে আম ধরায় আশায় বুক বেঁধেছেন তিনি। 


গাছে থাকা শেষ পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার না হলে কমপক্ষে ৮০ থেকে ১০০ মণ আম পাওয়া যাবে। বাজারে এই আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সব খরচ বাদ দিয়ে দুই লাখ টাকা বেশি আম বিক্রি করতে পারব।’ 


সূর্যপুরী গাছের মালিক সাইদুর রহমান বলেন, গাছটি আমার বাবার দাদার (প্রপিতামহ) লাগানো। এরপর থেকে আমাদের পরিবারের লোকজনই পরম্পরা এটাকে দেখাশোনা করে। ধীরে ধীরে গাছটি আকারে বাড়তে শুরু করে। গাছটির অদ্ভুত দিক হলো এর ডালগুলো। মূল কাণ্ড থেকে ডাল বেরিয়ে একটু ওপরে উঠে আবারও তা মাঠিতে নেমে গেছে। তারপর আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওপরে উঠেছে। দেখতে অনেকটা নদীর ঢেউয়ের মতো উঁচু-নিচু।

গাছের মূল কাণ্ড থেকে বেরিয়েছে ২০টির মতো শাখা। গাছটির শাখাগুলোর দৈর্ঘ্য আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ ফুটের মতন। গাছের প্রতিটি ডালে চাইলে অনায়াসে হাঁটাচলা ও বসা যায়।

দিনাজপুর থেকে পরিবারসহ গাছটি দেখতে এসেছেন জয়নুদ্দিন নামের এক দর্শনার্থী। তিনি বলেন, অনেকের মুখে শুনেছি এই গাছটির কথা। আজ পরিবারসহ এলাম। আসলেই গাছটি অনেক সুন্দর। গাছটির ডালপালা অনেক বড়। অনেক ভালো লাগল গাছটি দেখে। 



সূর্যপুরী জাতের এই গাছটির আম খুবই সুস্বাদু, মিষ্টি ও দেশের ব্যাপক পরিচিতি হওয়ায় বেশ চাহিদা রয়েছে রয়েছে এই গাছের আমের। গাছ থেকে আম ভাঙার আগেই অনেকেই অগ্রিম টাকা দিয়ে থাকেন লিজ নেওয়া ব্যক্তিকে। তা ছাড়া স্থানীয় সরকারি অফিসে কর্মরত অফিসারগণ নিজ নিজ এলাকায় এই আম কিনে পাঠান। 


বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) যোবায়ের হোসেন জানান, সুর্যপুরী আমের উপজেলা হিসেবে পরিচিত বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা। আর এই উপজেলাতেই রয়েছে প্রায় ২৩০ বছরের পুরোনো এশিয়ার সর্ববৃহৎ সুর্যপুরী আমগাছটি। স্থানীয়দের বর্ণনা অনুযায়ী বয়স হলেও গাছটিতে এবার তুলনামূলক ভাবে বেশি আম ধরেছে। যা সবাইকে অবাক করেছে। 

ইউএনও আরও জানান, গাছটির পাশেই একই আঙ্গিকে আরও একটি সুর্যাপুরী আমগাছ বড় হচ্ছে। যেহেতু বড় গাছটির বয়স হয়ে গেছে। তাই ছোট গাছটিকেও যত্নসহকারে বড় করে তোলে বড় গাছটির যে সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য তা ধরে রাখে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে গাছের মালিক ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা লোকজনকে।

যেভাবে যাবেন...

ঠাকুরগাঁও শহর থেকে বালিয়াডাঙ্গীর দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। রাণীশংকৈল থেকে ৩০ কিলোমিটার আর বালিয়াডাঙ্গী থেকে দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে হানিফ,শ্যামলি,নাবিল , তাজ সহ বিভিন্ন পরিবহনে ঠাকুরগাঁও যেতে পারবেন। এ ছাড়া ঠাকুরগাঁও থেকে বালিয়াডাঙ্গী যেতে লোকাল বাস সার্ভিস আছে। লালমনিরহাট বা ঠাকুরগাঁও রুটে চলাচলকারী ট্রেনেও যেতে পারেন। বাসভেদে ভাড়া পড়বে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। আর ট্রেনে ৬৫০ থেকে ১৬০০ টাকা। আর বিমানযোগে যেতে চাইলে ৩৬০০ টাকা সৈয়দপুর পর্যন্ত (টিকিটের দর ওঠানামা করে)। তারপর সৈয়দপুর থেকে বাসে ১০০ টাকা ভাড়া পড়বে। সবশেষ গাছটি দেখতে আপনাকে ২০ টাকায় টিকিট কাটতে হবে।


আরো পড়ুন:




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Holy Foods ads

Holy Foods ads

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget